সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়: তেঞ্জিং এবং হিলারি। এঁরাই বিশ্বের প্রথম এভারেস্ট জয়ী। কিন্তু এক ইংরেজ অভিযাত্রীর এভারেস্ট যাত্রা এবং মৃতদেহ সম্পূর্ণ অন্য তথ্য দেয়। বারবার জন্ম দিয়েছে বিতর্কের। আজও প্রশ্ন ওঠে ইংরেজ অভিযাত্রী জর্জ ম্যালোরিই কি সর্বপ্রথম বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ছুঁয়ে এসেছিলেন ? বিতর্ক উসকে দেয় স্ত্রীয়ের না পাওয়া ছবি।
১৯২৪ সালে এভারেস্ট জয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন জর্জ ম্যালরি। যদিও সেই এই অভিযান ছিল তাঁর তৃতীয় এভারেস্ট অভিযান। আগের দুই অভিযানে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল। এভারেস্ট মানেই যেমন হাতছানি তেমনই মৃত্যু ভয়ও প্রচুর। তাই স্ত্রী রুথ চাননি ম্যালরি আবার এভারেস্ট অভিযানে যান। ম্যালরি স্ত্রীকে বলেছিলেন, “এবার যদি এভারেস্ট জয় করতে পারি তাহলে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় তোমার একটা ছবি রেখে আসব।” এই প্রতিশ্রুতিই জন্ম দেয় বিশ্বের অন্যতম বড় বিতর্কের। এই অভিযানে তাঁর সঙ্গী ছিলেন মাত্র ২২ বছর বয়সী স্যান্ডি অরভিন। জুন মাসে তারা অভিযান করেন। সামনেই ছিল বর্ষার মরসুম। সবথেকে ভয়ঙ্কর সময়ে অভিযান চালালেন তাঁরা।
স্ত্রী’কে চিঠিতে জর্জ ম্যালরি লিখেছিলেন, “বর্ষাকাল এগিয়ে আসছে। এরপর আর ওঠার সুযোগ পাবো কি না জানি না। আমি এখানে পড়ে থাকতে চাই না। পরশুদিন আমরা যাত্রা শুরু করতে চাই।” ৪ জুন, তাঁরা অ্যাডভান্স বেসক্যাম্প থেকে রওনা হয়ে পরের তিন দিনে ষষ্ঠ বেসক্যাম্পে পৌঁছে গিয়েছিলেন।
৮ জুন, ওই ক্যাম্প থেকে দুপুরের মধ্যেই চূড়ার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। তাদেরকে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল ৮,৬০০ মিটার উচ্চতায়। এখান থেকে চূড়ায় উঠতে বাকি ছিল ২৫০ মিটার। সামনে ছিল ৪০ ফুটের শুধু বরফের দেওয়াল। তাদের আর কোনও খবর পাওয়া যায়নি। প্রচণ্ড তুষার ঝড়ে দুজনই প্রাণ হারিয়েছিলেন এটা ধরেই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হিলারিদের এভারেস্ট জয়ের পর প্রশ্ন উঠতে শুরু করে তাঁরাই কি প্রথম এভারেস্ট জয়ী নাকি ম্যালরি ও অরভিন। উত্তর লুকিয়েছিল পাহাড়েই।
বিতর্কের উত্তর পেতে ১৯৯৯ সালে শুধুমাত্র ম্যালরি ও তাঁর সঙ্গী অরভিনকে খুঁজতে একটি আলাদা অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের মূল উদ্দেশ্যই ছিল তাদের মৃতদেহ এবং তাদের ক্যামেরা খুঁজে বের করা। কারণ, যদি ক্যামেরাটি খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে হয়তো সেখান থেকে জানা যেতে পারে তারা সত্যিই এভারেস্টের চূড়ায় পা রেখেছিলেন কি না। অভিযানে স্যান্ডি অরভিনের দেহসহ সব কিছুই নিখোঁজ থাকলেও খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল ম্যালরির মৃতদেহ। ম্যালরির পোষাকের মধ্যেই সবকিছু উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। শুধু ছিল না তাঁর স্ত্রীর ছবি, যে ছবিটি তিনি এভারেস্টের চূড়ায় রেখে আসার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তাঁর স্ত্রীর কাছে।
এরপর থেকে নানা সময়ে নানা বিতর্ক হয়েছে, তত্ত্ব এসেছে। তবে তাদের এভারেস্ট জয় করা নিয়ে থেকে গিয়েছে ধন্ধ। ম্যালরি পুত্রের বক্তব্যে ধন্ধ আরও বেড়ে যায়। বলেছিলেন, “শুধু এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে পারাটাই এভারেস্ট জয় করা নয়, সেখান থেকে সফলভাবে নেমে আসাও এর অংশ।” ঘটনার ইতি যেন , ‘শেষ বলে কিছু নেই’-এর মতো।
১৯২১ সালে পরীক্ষামূলক অভিযান দলে ছিলেন ম্যালরি। সেবার নর্থ কল পর্যন্ত গিয়ে ফিরে এসেছিল দল। ১৯২২ সালেই ফের অভিযান । এভারেস্ট জয়ের উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম পরিকল্পিত অভিযানে সাত জন শেরপা তুষার ঝড়ের কবলে পড়ে মারা গিয়েছিলেন। এই অভিযানের সঙ্গেও ছিলেন ব্রিটিশ পর্বতারোহী ম্যালরি।
The post মৃত অভিযাত্রীর হারানো ছবি এবং প্রথম এভারেস্ট জয়ের বিতর্ক appeared first on Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper.
from Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper http://bit.ly/2EJcyqH
No comments:
Post a Comment