সৈকত ঘোষ: রূপকুণ্ড হল ভারাতের একটি সর্বাধিক জনপ্রিয় ট্রেকিং৷ স্থানীয়দের কথা অনুযায়ী এটি একটি রহস্যময় হিমবাহ হ্রদ৷ এই হ্রদের কিনারায় পাওয়া শত শত মানব কঙ্কালের কারণে মানুষের কাছে এই স্থানটি আরও বিখ্যাত এবং রহস্যময় হয়ে উঠেছে।
ত্রিশূল চৌখাম্বার মতো পর্বত শৃঙ্গ এই ট্রেকিং-এর গুরুত্ব বৃদ্ধি করে৷ এর সর্বাধিক উচ্চতা ১৬,৪০০ ফুট। আমি এবং আমার বন্ধুরা মিলে পূজোর ছুটির পরিকল্পনা করছিলাম৷ বন্ধুদের মধ্যে পরিকল্পনার সময় সাধারণত যা হয়ে থাকে৷ একজন বলে উত্তরে যাবে তো একজন বলে দক্ষিণে৷ শেষ পর্যন্ত ঠিক হল, আমরা এবার একটি রহস্যময় ও রোমাঞ্চভরা ট্রেকিংয়ে বেড়বো।
তৎক্ষণাৎ মাথায় এলো এক এবং অদ্বিতীয় রূপকুন্ড ট্রেক-এর কথা৷ সিদ্ধান্ত হল অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রওনা দেব রহস্যঘেরা রূপকুণ্ডের উদ্দেশ্যে৷ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ট্রেকিং-এ যাওয়া যায়৷ যেমন- এডভেঞ্চার নেশন, ইন্ডিয়া হিক্স, হিমালায়ান ট্রেকারস এদের মধ্যে অন্যতম। এই ধরনের সংস্থাগুলি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ট্রেকিং-এর দায়িত্ব পালন করে থাকে।
আমাদের হাতে বেশি ছুটি না-থাকার কারণে ঠিক হয় ফ্লাইটে যাওয়া হবে কলকাতা থেকে দিল্লি পর্যন্ত৷ তারপর দিল্লি থেকে ট্রেনে (কাঠগোদাম এক্সপ্রেসে) কাঠগোদাম জংশন। সেই মতো শুরু হয় আমাদের যাত্রা৷ পূজোর গন্ধ গায়ে মেখে রহস্যঘেরা রূপকুণ্ডের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ি আমরা৷ নেতাজি সুভাষ বিমানবন্দর থেকে দিল্লি৷ তারপর ট্রেনে করে কাঠগোদাম৷ ট্রেন থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পেলাম, স্টেশনে আমাদের জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছে।
গাড়িতে চাপতেই শুরু হয়ে গেল আমাদের লোমহর্ষক যাত্রা৷ গাড়ি থেকেই দেখতে পাচ্ছিলাম প্রকৃতির বৈচিত্র্যপূর্ণ মাধুর্য৷ সন্ধ্যার মধ্যে আমরা
পৌঁছে গেলাম লোহাজুঙ (lohajung) অর্থাৎ আমাদের বেস ক্যাম্পে৷ কাঠগোদাম থেকে আমাদের বেস ক্যাম্পে পৌঁছতে গাড়িতে আমাদের সময় লাগল প্রায় ৮ থেকে ১০ ঘন্টা।
লোহাজুঙ-এর উচ্চতা প্রায় ৭,৫০০ ফুট৷ অর্থাৎ গন্তব্য থেকে আমাদের বেস ক্যাম্প ছিল ৯ হাজার ফুট নিচে৷ গাইড আমাদের সবাইকে একত্রিত হতে বলল এবং ট্রেকিং-এর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের দিল৷ যেমন, ট্রেকিং চলাকালীন সবাই গাইডের পরামর্শ মেনে চলা৷ কেউ কোনও রকম অসুস্থতাবোধ করলে, তৎক্ষণাৎ গাইডকে জানানো৷ সবাই যেন মেডিসিন এবং পানীয় জল বহন করে৷ এছাড়াও আমাদের আরও বলা হল যে আজকের পর থেকে আমরা তাবুতে স্লিপিং ব্যাগের ভেতরে শোবো ইত্যাদি৷
এই ট্রেকিংটি শেষ করতে আমাদের মোট সময় লেগেছিল ৯ দিন। এই ট্র্যাকিং চলাকালীন আমরা উপলব্ধি করলাম, যেদিকেই তাকাই, সেদিকেই রয়েছে প্রকৃতির অপূর্ব মাধুর্য৷ সবুজ আর সবুজ৷ আবার কোথাও মনে হচ্ছিল আমরা যেন উইন্ডোজ এক্সপির মধ্যে চলাফেরা করছি, দেখতে পাচ্ছিলাম সূর্যের লুকোচুরি খেলা৷ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেল তুষারপাত৷ সে যে কী অপরূপ দৃশ্য, চোখে না-দেখলে কল্পনা করতে পারতাম না৷
কোথাও আবার সু-বিশাল জলপ্রপাত মনকে মুগ্ধ করে দেয়। আর সামনে তাকাতেই দেখলাম সু-বিশাল পর্বতশৃঙ্গ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে৷ এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ হল ত্রিশূল, নন্দ ঘুন্তি, চৌখম্বা রেঞ্জ। প্রকৃতির ইচ্ছায় আমরা আরও একটি ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সাক্ষী ছিলাম৷ সেটি হল মেঘ বিস্ফোরণ৷ আমাদের ট্রেকিং-এর সপ্তম দিনে ঘটল এই বিপর্যয়৷ অর্থাৎ বাবুই বাসা থেকে রূপকুণ্ড যাওয়ার পথে।
তবে গাইড-বন্ধু’র পরামর্শে আমাদের কারোর কোনও ক্ষতি হয়নি। আমরা রুপকুন্ডে পৌঁছে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। আরও আমাদের রোমহর্ষক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, যখন আমরা দেখেছিলাম শত শত নর কঙ্কাল হ্রদের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে। রূপকুণ্ড থেকে আরও ২১০ মিটার উঁচুতে যে ভিউ পয়েন্ট রয়েছে তার নাম জুনারগালি৷ এই স্থান থেকে ত্রিশূল-সহ বিভিন্ন পর্বতশৃঙ্গের মনোরম দৃশ্য উপলব্ধি করা যায়। এবার আমাদের বাড়ি ফেরার পালা৷ আমাদের সকলেরই খুব মন খারাপ হয়ে গেল, যখন ভাবছিলাম প্রকৃতির মায়া কাটিয়ে আমাদের বাড়ি ফিরে যেতে হবে৷
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ট্র্যাকিংয়ের খুঁটিনাটি:-
কিভাবে যাবেন- কলকাতা থেকে কাঠগোদাম যাওয়ার সরাসরি খুব বেশি ট্রেন নেই৷ কিন্তু যদি দিল্লি হয়ে যাওয়া যায়, তাহলে অনেক রকম ট্রেন
এর সুবিধা রয়েছে৷ আর ফ্লাইটে গেলে, তাহলে কলকাতা থেকে দিল্লি পর্যন্ত ফ্লাইট৷ তারপর দিল্লি থেকে ট্রেনে কাঠগোদাম।
কোথায় থাকবেন- যে সংস্থার মাধ্যমে ট্রেকিং করা হচ্ছে সেই সংস্থায় সমস্ত কিছু ব্যবস্থা করে দেয়।
খরচ- সবকিছু মিলিয়ে মোটামুটি খরচ হতে পারে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা।
প্রয়োজনীয় সামগ্রী- রুকসাক ব্যাগ (৫০লিটার), টর্চ, হেড ল্যাম্প, একটি উইন্ড প্রুফ জ্যাকেট, ট্রেকিং জুতো, ওয়াটারপ্রুফ গ্লাভস, উলেন
গ্লাভস, মোজা বাঁদুরে টুপি, তাপ পরিধান, জলের বোতল, ডাউন জ্যাকেট, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র (ORS, norflox tz, Diamox etc), সানগ্লাস, ট্র্যাক প্যান্ট। (Decathlon নামক এই সংস্থাটি থেকে ট্রেকিং এর সমস্ত রকম প্রয়োজনীয় বস্তু পাওয়া যায়)
ছবি- লেখকের নিজের তোলা
The post চলুন পূজোর ছুটিতে ঘুরে আসি ভারতের এক রহস্যময় জায়গা থেকে appeared first on Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper.
from Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper https://ift.tt/2YaZ2Ia
No comments:
Post a Comment