সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়: রাজীব গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে বামেরা শহরের দেওয়াল ভরিয়েছিল তাঁর দ্বিতীয় বিয়ের আয়োজন করে। সেই বিয়ের নাপিত ঠিক করে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বামেদের সেই উত্তরও দেওয়া হয়েছিল, মাধ্যম ছিল সেই দেওয়াল লিখন।
এখনও এই চর্চা রয়েছে তবে সেটা অনেকটা ডিজিটালি হয়েছে অর্থাৎ ফেসবুক ওয়ালে উঠে এসেছে ট্রোলের আকারে। তবে কোনও রাজনৈতিক দলের বিপক্ষকে বিঁধতে বিশেষ কোনও ভালো ফেসবুক দেওয়াল লিখনের দেখাও মেলে না।
নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। আর পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন মানেই নানারকম লড়াই রয়েছে। হাতাহাতি, মারমারি এসব যেমন রাজ্যের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তেমনই জড়িয়ে রয়েছে দেওয়াল লিখন। দেওয়াল লিখনের কারিকুরি ছেড়ে নির্বাচনের বাকযুদ্ধ হলেও সেটা অনেকক্ষেত্রেই এখন গিয়ে পৌঁছায় কু-কথায়।
এই দল ছেড়ে বেড়িয়ে এসে অর্জুন সিং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে বরাহের সঙ্গে তুলনা করছেন, কখনও আবার সায়ন্তন বসু যিনি এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী তিনি জনসমক্ষে গুলি চালানোর কথা বলছেন। তৃণমূলের ক্ষেত্রেও এমন ইতিহাস রয়েছে, বাম জমানার শেষ দিকে কু-কথা চরম জায়গায় পৌঁছেছিল। বছর বিশ ত্রিশেক আগে এই দাবি , পালটা দাবি আক্রমনের অন্যতম পথ ছিল দেওয়াল লিখন।
ঘটনা ১৯৮৪ সালের, অক্টোবরে ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করা হয়। এরপরে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দেওয়াল ভরে গিয়েছিল। বাম কংগ্রেসের খোঁটা দেওয়া, উত্তর পালটা উত্তরের লড়াই হয়েছিল দেওয়ালে দেওয়ালে, যা বছর ষোলো আগে বিবাহিত রাজীবকে নতুন করে ছাদনাতলায় নিয়ে গিয়েছিল। তবে সে দিন কোনও কু-কথা ছিল না। প্রথম আগুনে ঘি দিয়েছিল বামেরা। লিখেছিল , ‘ঢ্যাং কুড়াকুড় বাদ্যি বাজে, কাটা হাত দিয়ে, চব্বিশে ডিসেম্বর আসছে ওগো, রাজীব গান্ধীর বিয়ে।’
১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী মারা যাওয়ার পরে ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের সময়ে এই দেওয়াল লিখনই লিখেছিল বামফ্রন্ট। এমনিতেই তারা এই বিষয়ে চিরকালই পারদর্শী। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের অনেক আগে তাদেরই করা একটি প্যারোডি থেকে ‘টুকে’ দলের গান বানিয়ে দলের নির্বাচনী গান বানিয়ে কমিশনের রোষানলে পড়েছিলেন আসানসোল থেকে বিজেপির প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়।
ফেরা যাক ‘৮৪ সালে। ইন্দিরা পুত্রকে নিয়ে বামেদের ওই দেওয়াল লিখনের পালটা দিয়েছিল কংগ্রেসও। তাদের দেওয়াল লিখনে উত্তরে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে সেই ছাদনাতলায় হাজির করেছিলেন, বিবাহ অনুষ্ঠানের নাপিত হিসাবে। কংগ্রেস লিখেছিল , ‘ঠিক বলেছিস, ঠিক বলেছিস, ঠিক করেছিস ভাই। ওই বিয়েতে জ্যোতিবাবুর নাপিত থাকা চাই’।
একবার বামেরা লিখেছিল, ‘একটি গরুর চারটে ঠ্যাং, কংগ্রেস কে মারো ল্যাং।’ উত্তরে ওরা লিখললো, ‘মে, আসছে দিন জ্যোতিবাবুর বিয়ের দিন’। ফের পালটা বামেদের। লেখা হয়েছিল, ‘বেশ করেছিস, মমতাকে সাজিয়ে রাখিস’। স্বাধীনতার পর থেকে একের পর এক নির্বাচনের আরও এমন উদাহরণ রয়েছে। ‘জোড়া বলদের আটটি ঠ্যাং , কংগ্রেসকে মারো ল্যাং ‘। ‘কলির কেষ্ট বাজায় বাঁশী , অনিলাদেবী নাচে। জ্যোতি পাঁঠা তবলা বাজায় , খুনী প্রমোদ হাসে’। ‘অজয় জ্যোতি সুশীল ধাড়া, এদের করো বাংলা ছাড়া’। ‘চীনের ওই কাস্তে হাতুড়ি, পাকিস্তানের তারা, এর পরেও কি বলতে হবে, দেশের শত্রু কারা? , ‘ভুলবো মোরা বাবার নাম , ভুলবো নাকো ভিয়েতনাম’-এর মতো স্লোগান এবং দেওয়াল লিখন।
The post বাম অনুষ্ঠিত রাজীব গান্ধীর ‘দ্বিতীয়’ বিয়েতে কংগ্রেসের ‘নাপিত’ ছিলেন জ্যোতিবাবু appeared first on Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper.
from Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper https://ift.tt/2V4lWvn
No comments:
Post a Comment