Sunday, March 31, 2019

পাড়ায় পাড়ায় ভোটের আড্ডা উঠে এল সমাজের দেওয়ালে

পাড়ার রাজনৈতিক আড্ডার ঠেক বদলে বাঙালি এখন ফেসবুক গ্রুপে মজেছে। যত বেশি দিন যাচ্ছে তত বেশি করে ফেসবুককে বুকে আঁকড়ে নিচ্ছে বাংলার চোদ্দো থেকে চুরাশি৷ সেলফি থেকে নিজের খুচরো প্রতিভার শো-কেস৷ বিপ্লব থেকে বিদ্রোহ, সব কিছুকে একছাতার তলায় তুলে ধরার এ যেন এক অদ্ভুত মঞ্চ৷

একটা সময় ছিল যখন লোকসভা নির্বাচনের আগের কয়েক মাস রাজনীতির আলোচনায় ঝড় উঠত পাড়ার চায়ের দোকানে৷ সকালে বাজার করতে বেরিয়ে বাড়ির কর্তাটি মাছ কিনতে কিনতে সাবলীলভাবে আলোচনা করতেন কেন্দ্র সরকারের মুক্ত অর্থনীতির সু কিংবা কুপ্রভাব৷ কলেজ পড়ুয়া সদ্য ছাত্র-রাজনীতিতে হাতে খড়ি হওয়া ছেলেটি, বিকেলের পাড়ার ক্রিকেট/ফুটবল শেষ করে মাঠেই বসে পড়ত কোন সরকার গরীবদের কথা ভাবছে, কেই বা পাকিস্তানকে উচিৎ শিক্ষা দিতে পারে সে নিয়ে আলোচনা করতে।

চায়ের দোকান, পাড়ার মাঠের এই আড্ডাগুলো এখন আর বিশেষ চোখে পড়ে না তার জায়গায় বাংলার সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ এখন সময় কাটান ফেসবুকে। বাঙালির চিরাচরিত রাজনৈতিক আলোচনাগুলো হয়ে থাকে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে। তাই কি?

এই প্রশ্ন নিয়েই, সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের মুখে Kolkata24x7-এর প্রতিনিধি শেখর দুবে কথা বললেন ফেসবুকের কয়েকটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক গ্রুপের অ্যাডমিনদের সঙ্গে৷ তাদের মূলত দুটো প্রশ্ন করা হয়,
১- পাড়ার চায়ের দোকানের রাজনীতির আড্ডাগুলোর অনেকটা কি এখন ফেসবুক গ্রুপে উঠে এসেছে?
২- ফেসবুকের হওয়া এই রাজনৈতিক আলোচনা কি সাধারণ ভোটারদের প্রভাবিত করে?
ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ অ্যাডমিনদের দেওয়া উত্তরগুলি রইল পাঠকদের জন্য।

গ্রুপের নাম – সোজাসাপ্টা
সদস্য সংখ্যা – প্রায় ৩ হাজার৷
অ্যাডমিন – সুমন্ত্র মাইতি
গ্রুপের রাজনৈতিক মতাদর্শ – ডানপন্থা
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সোশ্যাল মিডিয়াতে ডানপন্থীরা অন্যদের থেকে কয়েক পা এগিয়ে৷ আর ডানপন্থী ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছে ‘সোজাসাপ্টা’ অবশ্যই তীর্থক্ষেত্র৷ এই গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা সুমন্ত্র মাইতি অনেকটাই আগ্রাসী ঢঙে কথা বলেন৷ তিনি স্পষ্টই জানালেন, আমরা ডানপন্থায় বিশ্বাসীরা এই গ্রুপে আলোচনা করি৷ রাজনৈতিক দল বললে আমাদের গ্রুপ বিজেপিকে সমর্থন করে৷ বাংলার ডানপন্থীদের কাছে এই গ্রুপ সবসময় প্রিয়৷ এই গ্রুপ থেকে পরে আরও অনেক ডানপন্থী গ্রুপ তৈরি হয়েছে৷

প্রশ্ন: পাড়ার চায়ের দোকানের রাজনীতির আড্ডাগুলোর অনেকটা কি এখন ফেসবুক গ্রুপে উঠে এসেছে?
সুমন্ত্র: না পুরোপুরি নয়৷ এমনটা নয় যে পাড়ার আড্ডাগুলো আর হয়না৷ গ্রামের দিকে এখনও ফেসবুকের ব্যবহারে সাবলীল নন এমন মানুষ রয়েছেন৷ তবে হ্যাঁ ফেসবুকের গ্রুপগুলোতে ইয়াং জেনারেশন অনেক সাবলীলভাবে বক্তব্য রাখতে পারে৷ পাড়ার চায়ের দোকানের আড্ডাগুলোয় বক্তা থাকতেন একজন বা দুজন, শ্রোতা থাকতেন অনেক বেশি৷ ফেসবুক গ্রুপে কেউ কিছু বলতে চাইলে তাকে মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া যায় না৷ নিজের পুরো বক্তব্য তিনি কমেন্টের মাধ্যমে লিখে প্রকাশ করেন৷ এইসব কারণে গ্রুপগুলো জনপ্রিয় হচ্ছে৷

প্রশ্ন: ফেসবুকের হওয়া এই রাজনৈতিক আলোচনা কি সাধারণ ভোটারদের প্রভাবিত করে?
সুমন্ত্র: হ্যাঁ করে৷ একটা সময় যখন সোজাসাপ্টা তৈরি হয়নি তখন বামপন্থীদের তৈরি গ্রুপে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হত৷ সেগুলোর কাউন্টার করতে গেলে অনেক সময় গ্রুপ থেকে বের করে দেওয়া হত৷ সেই জায়গা থেকেই সোজাসাপ্টা তৈরি করি, এরপর অনেক মানুষ আসেন, আমাদের সঙ্গে গ্রুপে রাজনৈতিক আলোচনায় অনেকের মতাদর্শ পরিবর্তন হতে দেখেছি৷

গ্রুপের নাম – গুরুচন্ডালী
সদস্য সংখ্যা – ৪৮ হাজারের বেশি
অ্যাডমিন – ঈপ্সিতা পাল
গ্রুপের রাজনৈতিক মতাদর্শ – বামপন্থা৷

বাংলাতে ফেসবুক রাজনৈতিক গ্রুপের মধ্যে এই গ্রুপটি সবচেয়ে বেশি চর্চিত৷ তবে ফেসবুক নয়, এই গ্রুপের জন্ম হয়েছে অন্য একটি জনপ্রিয় সোশ্যাল সাইট অরকুটে৷ সাইটটি বন্ধ হওয়ার পর ফেসবুকেও জনপ্রিয়তা অর্জন করে এই গ্রুপ৷ গুরুচন্ডালীর নিজস্ব ওয়েবসাইট, অনলাইন এবং অফলাইন প্রকাশনাও রয়েছে৷ এই গ্রুপটি গুরুচন্ডালী সাইটের অংশ হিসেবে শুরু হয়েছিল৷ এমনটাই জানালেন অ্যাডমিন ঈপ্সিতা পাল৷

প্রশ্ন: পাড়ার চায়ের দোকানের রাজনীতির আড্ডাগুলোর অনেকটা কি এখন ফেসবুক গ্রুপে উঠে এসেছে?
ঈপ্সিতা পাল – অবশ্যই উঠে এসেছে৷ তবে সেটা এখন নয়, বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই৷ ফেসবুকের গ্রুপগুলোতে রাজনৈতিক আলোচনায় অনেক মানুষ অংশ নেন৷ নিজেদের মতামত দেন৷ অন্যদেরটাও শোনেন৷ ভোটের আগে বিভিন্ন ওপিনিয়ন পোল ক্রিয়েট করা হয়৷ যেখানে বড় সংখ্যায় মানুষ অংশ নেন৷

প্রশ্ন: ফেসবুকের হওয়া এই রাজনৈতিক আলোচনা কি সাধারণ ভোটারদের প্রভাবিত করে?
ইপ্সিতা: হ্যাঁ একটা তো প্রভাব রয়েইছে৷ যে কোন আলোচনা সাধারণ মানুষের উপর প্রভাব ফেলে৷ একটা ভালো আলোচনা অনেকের মতামত পরিবর্তন করতে পারে৷ আমার নিজের এরকম অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ অনেককেই দেখেছি মতাদর্শ পরিবর্তন করতে৷

গ্রুপের নাম – নগরচন্ডালী
সদস্য সংখ্যা – ১৪হাজার ৩০৫জন৷
অ্যাডমিন – নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য
গ্রুপের রাজনৈতিক মতাদর্শ – নিরপেক্ষ
ফেসবুকের অন্যতম জনপ্রিয় গ্রুপ হল নগরচন্ডালী৷ এই গ্রুপের অ্যাডমিন এবং প্রতিষ্ঠাতা নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য জানালেন মতবিরোধের কারণে অন্য একটি বামপন্থী গ্রুপ থেকে বেরিয়ে এসেই নগরচন্ডালী তৈরি করেন তিনি৷

প্রশ্ন: পাড়ার চায়ের দোকানের রাজনীতির আড্ডাগুলোর অনেকটা কি এখন ফেসবুক গ্রুপে উঠে এসেছে?
নীলাঞ্জন: না সেভাবে বলা যায় না। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে একটা বড় অংশ এখনও সেলফি পোস্ট করেই সময় কাটায়৷ রাজনৈতিক গ্রুপগুলোতেও অ্যাক্টিভ সদস্যের সংখ্যা খুবই কম৷ পাড়ার চায়ের দোকানের আড্ডার জায়গা এখনও নিতে পারেনি ফেসবুকের গ্রুপগুলো৷

প্রশ্ন: ফেসবুকের হওয়া এই রাজনৈতিক আলোচনা কি সাধারণ ভোটারদের প্রভাবিত করে?
নীলাঞ্জন: হ্যাঁ, আমি নিজেই তার বড় প্রমাণ৷ ফেসবুকে ভালোভাবে অ্যাক্টিভ হওয়ার আগে আমি বামপন্থায় বিশ্বাসী ছিলাম৷ এখন আমি আমার নিজের জাতির মানুষের প্রতি হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলি৷ আগে এটা করতাম না৷ ফেসবুকে এসে বিভিন্ন রাজনৈতিক আলোচনার অংশ নেওয়ার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের অপ্রকাশিত খবর জানতে না পারলে এই পরিবর্তনটা সম্ভব ছিল না৷

গ্রুপের নাম – ভারতবর্ষ
সদস্য: ৬.৫ হাজার জন প্রায়৷
অ্যাডমিন- সুমন বিশ্বাস (যদিও ইনি সদ্য অ্যাডমিনশিপ ছেড়েছেন)
গ্রুপের রাজনৈতিক মতাদর্শ – নিরপেক্ষ
অন্য একটি গ্রুপ থেকে মতবিরোধের কারণে বেরিয়ে এসেই এই গ্রুপ তৈরি করেছিলেন কয়েকজন বামমনস্ক মানুষ৷ যদিও এই গ্রুপ বিশেষ কোনও দল বা মতাদর্শের পৃষ্ঠপোষক নয়, এমনটাই দাবি প্রাক্তন অ্যাডমিন সুমন বিশ্বাসের৷

প্রশ্ন:পাড়ার চায়ের দোকানের রাজনীতির আড্ডাগুলোর অনেকটা কি এখন ফেসবুক গ্রুপে উঠে এসেছে?
সুমন: না এখনই এটা বলার সময় আসেনি৷ তবে হ্যাঁ, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ফেসবুকসহ অন্যান্য জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়াগুলি রাজনৈতিক আলোচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে৷ পাশাপাশি যে কোনও নির্বাচনেও ভালো রকমের প্রভাব ফেলবে৷

প্রশ্ন: ফেসবুকের হওয়া এই রাজনৈতিক আলোচনা কি সাধারণ ভোটারদের প্রভাবিত করে?
সুমন: হ্যাঁ একটা প্রভাব তো থাকেই৷ অনেক সময় কোন প্রোপাগান্ডা বারবার চালানো হলে অনেকে সেটাকেই সত্যি বলে মেনে নিতে শুরু করেন৷ এরকম প্রোপাগান্ডার কাউন্টার না করা হলে তার প্রভাব গ্রুপের সাধারণ সদস্যদের উপর পড়েই তো

The post পাড়ায় পাড়ায় ভোটের আড্ডা উঠে এল সমাজের দেওয়ালে appeared first on Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper.



from Kolkata24x7 | Read Latest Bengali News, Breaking News in Bangla from West Bengal's Leading online Newspaper https://ift.tt/2HY1zMC

No comments:

Post a Comment